দৈনিক প্রত্যয় ডেস্কঃ ‘আমরা করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণের পিক টাইম অতিক্রম করছি, কিংবা পিক টাইমের খুব কাছাকাছি রয়েছি বলে আমার কাছে মনে হচ্ছে।’ করোনাভাইরাস প্রসঙ্গে গণমাধ্যমকে সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন বাংলাদেশের অণুজীববিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. বিজন কুমার শীল এ কথা বলেন।
ড. বিজন কুমার শীল গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের র্যাপিড ডট ব্লট কিট উদ্ভাবন দলের প্রধান বিজ্ঞানী। ১৯৯৯ সালে ছাগলের মড়ক ঠেকানোর জন্য পিপিআর ভ্যাকসিন আবিষ্কার করেছিলেন তিনি। ২০০২ সালে ডেঙ্গুর কুইক টেস্ট পদ্ধতির আবিষ্কারকও ড. বিজন। যা সিঙ্গাপুরে তার নামেই প্যাটেন্ট করানো। ২০০৩ সালে তিনি সার্স ভাইরাসের কুইক টেস্ট পদ্ধতির আবিষ্কার করেছিলেন। এটাও তার নামে প্যাটেন্ট করা।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সার্স ভাইরাস প্রতিরোধে সিঙ্গাপুর সরকারের একজন বিজ্ঞানী হিসেবে অন্যতম ভূমিকা পালন করেছিলেন তিনি। বর্তমানের করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মূলত সার্স-২ ভাইরাস। সার্সের ভয়াবহতার কথা মনে করে মানুষ যেন আতঙ্কিত না হয় সেজন্য বিজ্ঞানীরা কোভিড-১৯ নামকরণ করেছিলেন।
ড. বিজন কুমার শীল গণমাধ্যমকে বলেন, বর্তমানে দেশের করোনা পরিস্থিতিতে আমরা যে পরিমাণ স্যাম্পল পরীক্ষা করছি এবং দেখছি তাতে আমার ব্যক্তিগত ধারণা- ইতোমধ্যে বেশ সংখ্যক মানুষ করোনাভাইরাসের সংস্পর্শে এসেছেন। অনেকের মধ্যেই ক্লিনিক্যাল সাইন সেভাবে ডেভেলপ করেনি। যেমন কোনো পরিবারের একজন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, সেই পরিবারের অন্যদের শরীরে এন্টিবডি তৈরি হয়ে গেছে। কিন্তু তাদের মধ্যে করোনার তেমন কোনো লক্ষণ দেখা দেয়নি। হয়তো তাদের একটু সামান্য কাশি, পেটে ব্যথা, কিংবা একদিন সামান্য একটু ডাইরিয়া দেখা দিয়েছে, তারপর তিনি সুস্থ হয়ে গেছেন। এভাবে আমরা দেখতে পাচ্ছি বেশ সংখ্যক মানুষ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়নি, তবে সংস্পর্শে এসেছেন এবং তাদের শরীরে ভাইরাসের বিরুদ্ধে এন্টিবডি তৈরি হয়েছে। এটা কিন্তু খুবই ইম্পরট্যান্ট। এই লেয়ারটাকে কিন্তু করোনা ভাইরাস ভেদ করতে পারবেনা। তখন এই পরিবেশে ভাইরাসের পরিমাণ কমে আসবে। ধীরে ধীরে ভাইরাস যখন আর কোনও হোস্ট পাবে না, তখন ভাইরাস আর থাকবেনা, চলে যাবে।
তিনি আরও বলেন, যাদের মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ক্লিনিক্যাল সাইন বেশি ছিল, তাদের শরীরে এন্টিবডির পরিমাণ তত বেশি। অন্যদিকে, যারা করোনা ভাইরাসের সংস্পর্শে এসেছেন, কিন্তু লক্ষণ খুব কম ছিল তাদের শরীরে এন্টিবডিও কম তৈরি হয়েছে। এদের শরীরের প্লাজমা এই মুহূর্তে কোনো কাজে আসবে না। তবে তারা নিজেদের সুরক্ষা করবে। যারা করোনায় ৩-৪ দিন গলা ব্যাথা, শ্বাসকষ্ট, সর্দিকাশি বা পেটের সমস্যায় ভুগেছেন বা ম্যাসিভ আক্রান্ত হয়েছেন তাদের শরীরে বেশি এন্টিবডি তৈরি হয়েছে। অর্থাৎ যে যত বেশি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন তার শরীরে তত বেশি এন্টিবডি তৈরি হয়েছে। যাদের শরীরে বেশি এন্টিবডি তৈরি হয়েছে, তারা চাইলে প্লাজমা ডোনেট করে অন্যের জীবনও বাঁচাতে পারেন।
তাহলে কি বাংলাদেশ করোনা সংক্রমণের পিক টাইম অতিক্রম করছে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমার মনে হচ্ছে বাংলাদেশে এখন করোনাভাইরাসের পিক টাইম। কোনো ভাইরাসের সংক্রমণের পিক টাইম বলতে যা বোঝায় আমরা মনে হয় সেই টাইম অতিক্রম করছি। উল্লেখ্য, কোনো ভাইরাসের পিক টাইম বলতে কোন একটি স্থানে বা দেশে সংক্রমণের সর্বোচ্চ পর্যায়কে বোঝায়। পিক টাইমের পর ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ধীরে ধীরে কমে আসতে থাকে।
ডিপিআর/ জাহিরুল মিলন